পাকিস্তানের ‘ট্রাম্প কার্ড’: হোয়াইট হাউসে Rare Earth খনিজ তুলে ধরলেন আসিম মুনীর
ইসলামাবাদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীর এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে দেশের বিরল ও মুল্যবান “rare earth” (বিরল ধাতু) খনিজ সম্ভার তুলে ধরেছেন, যা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
এই পদক্ষেপটি পাকিস্তানের সংকটগ্রস্ত অর্থনীতি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। দেশটিতে মাইনিং, খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা অনেক আগে থেকেই রয়েছে, কিন্তু বাধা ছিল প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ।
বৈঠকে আলোচিত বিষয়সমূহ
-
বৈশ্বিক চাহিদা ও কৌশলগত গুরুত্ব
বিরল ধাতু ও অন্যান্য “critical minerals” (যেমন তামা, অ্যান্টিমনি) বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও সবুজ শক্তি খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের কাঁচামাল সরবরাহ স্থির করার জন্য নতুন উৎস খুঁজছে যা চীনভিত্তিক নির্ভরতাকে কমাতে পারে। -
চুক্তি ও মেমোরেন্ডাম অব আধ্যেন্ড (MoU) গঠন
পাকিস্তান সরকার ও এক মার্কিন খনিজ সংস্থা (USSM) একটি MoU স্বাক্ষর করেছে, যেখানে খনিজ রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রথম ধাপগুলিতে বিনিয়োগ চালানোর কথা বলা হয়েছে।
তবে এই MoU এখনও প্রকার ও শর্তে চূড়ান্ত চুক্তিতে পরিণত হয়নি। -
আলোচনায় অন্যান্য খাত
মেগা প্রকল্প ছাড়াও বৈঠকে আলোচনায় এসেছে বাণিজ্য, এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), ক্রিপ্টোকারেন্সি, শক্তি ও প্রযুক্তি সেক্টরগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ যুক্ত হওয়ার বিষয়।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মাঝে পারস্পরিক লাভভিত্তিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগবৰ্ধন করার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।
সমালোচনা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বৈঠক এবং খনিজ পরিকল্পনা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক উঠেছে:
-
বালুচিস্তানের স্বার্থ
বালুচিস্তান প্রদেশে বিরল ও মূল্যবান খনিজ সমূহ রয়েছে বলে বহুবার দাবি করা হয়েছে। তবে স্থানীয় বালুচ নেতারা দাবি করেছেন, এই সম্পদগুলি “পাকিস্তানের” নয়, বরং “বালুচিস্তান” প্রদেশের অধিকার। একটি খোলা চিঠিতে, মির ইয়র বালুচ ট্রাম্পকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন যে তারা মুনীর ও পাকিস্তান সরকার দ্বারা ভুল তথ্য দ্বারা প্রতারিত হতে পারেন। -
আঞ্চলিক সুরক্ষা ও সুবিধাবলীর দ্বৈততা
যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশের জ্যেষ্ঠ বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। খনিজ উত্তোলন প্রকল্প দীর্ঘ মেয়াদী এবং ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে নিরাপত্তাহীন এলাকায়।
আরও রয়েছে — চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (CPEC) ও পূর্বমধ্যবর্তী জটিল রাজনৈতিক সম্পর্ক, যা নতুন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর করে তুলতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও বাধা
-
দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প ও সময়সাপেক্ষ বাস্তবায়ন
খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্প সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।
ইতিমধ্যে, পাকিস্তানের ভূগর্ভস্থ খনিজ সম্ভারগুলোর একটি বড় অংশ এখনও প্রমাণীত নয়, ফলে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও পরীক্ষামূলক খনন অপরিহার্য হবে। -
নৈতিক ও পরিবেশগত উদ্বেগ
খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্পগুলিতে বহু ক্ষেত্রে পরিবেশ ও স্থানীয় জনসংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার প্রশ্নে উত্তেজনা দেখা দেয়।
প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলির স্থান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয় সমাধান করতে হবে। -
সাংবাদিকতা ও স্বচ্ছতা
পরবর্তী চুক্তি ও রপ্তানির শর্ত, রাজস্ব বণ্টন ও বিষয়বস্তুতে স্বচ্ছতা না থাকলে জনগণের আস্থা ও রাজনৈতিক সমর্থন হারাতে পারে।
0 Comments